ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

১১৯১ কোটি টাকা ঋণ আদায় ২২ মাসে

নিউজ জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩

১১৯১ কোটি টাকা ঋণ আদায় ২২ মাসে

ছবি সংগৃহীত

ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া এবং পরিশোধ না করা কিছু ব্যবসায়ীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে জোর অবস্থানে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। গত ১ বছর ১০ মাসে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত মামলা নিষ্পত্তি করে ব্যাংকগুলোর প্রায় ১ হাজার ১৯১ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ আদায় করেছে। ২২ মাসে ২ হাজার ২৪১ মামলা নিষ্পত্তি করেছে, কোর্ট ফি আদায় করেছে সাড়ে ৪ কোটি টাকার অধিক। 
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঋণ পরিশোধে বাধ্য করার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে তাগাদা প্রেরণ করে খেলাপিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় টাকা পরিশোধে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায় ও মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। আইনজীবীরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ হলো বিচারকের সদিচ্ছা। 
ব্যাংকের টাকা ঋণ নিয়ে বিত্তবান হওয়া বেশিরভাগ খেলাপির আত্মগোপনে ও বিদেশ পাড়ি জামানোর অভ্যাস দীর্ঘদিনের। পুলিশ খেলাপিদের সরে পড়া এবং পরোয়ানার বিষয় জেনে গা-ঢাকা দেওয়ায় মামলাজটে পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় আদালতের। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছে তেমনিভাবে বিচার কার্যক্রমও ব্যাহত হয়ে বাড়ে মামলাজট। ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর অর্থঋণ আদালতে যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান যোগদান করে অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন বিপুল মামলা নিষ্পত্তির জন্য নানা উদ্যোগ নেন।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের আদেশ প্রদান। এতে খেলাপিরা মামলা নিষ্পত্তিতে এগিয়ে আসে এবং বিপুল পরিমাণ ঋণও আদায় হয়। পাশাপাশি খেলাপিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। 
অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, ২০২১ সালে বিচারাধীন ছিল ৪ হাজার ৭২৬টি মামলা। এরপর ওই বছরের শুরু থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি হয় ২ হাজার ২৪১টি। বর্তমানে পেন্ডিং আছে ৪ হাজার ৮৫০টি। এই সময়ে নিষ্পত্তি করা মামলায় ১ হাজার ১৯১ কোটি ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৫ টাকার ঋণ আদায় করা হয়েছে। গত দুই বছরে সাড়ে ৪ কোটির অধিক কোর্ট ফি আদায় হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর একটি মামলায় আদায় করা টাকার পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি।

অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান মহোদয় যোগদানের পর থেকেই মামলা নিষ্পত্তি ও খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।  তিনি খেলাপিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল এবং ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর যেসব কর্মকর্তার অবহেলা ছিল তাদের বিরুদ্ধে শোকজ এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তাই মামলা দ্রুত গতিতে নিষ্পত্তি হয়েছে। 
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খেলাপিরা সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে মামলা বিলম্বিত করে প্রতিবন্ধকতা করত। এই সুযোগ যাতে তারা আর নিতে না পারে  সেজন্য আদালত ৯০ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতা কার্যক্রম সমাপ্ত করার চূড়ান্ত শুনানি আদেশ দেন অর্থঋণ আদালতের বিচারক। ফলে ৩০০ কোটি টাকার মতো খেলাপি মামলা ছোট ছোট মুলতবির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। গত ২২ মাসের মধ্যে মধ্যে ৯৬টি মামলার ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি ৬৭ লাখ 
৫৯ হাজার টাকার ডিক্রি পায় ব্যাংকগুলো, যার বদৌলতে গত ১ বছরে বিভিন্ন ব্যাংক খেলাপিদের কাছ থেকে ৭৮৩ হাজার ৩৮ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৮ টাকা ঋণ আদায় করে। বিচারকের এমন ইতিবাচক আইনি সিদ্ধান্তের কারণে কর্মঘণ্টা সাশ্রয় ও মামলাজট কমেছে উল্লেখ করে আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আরও জানান, সমন জারির ক্ষেত্রে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং শত কোটি টাকার মূল্যমানের খেলাপি ঋণের মামলার সমন ও নিলাম বিজ্ঞপ্তি অপ্রচলতি ও নামসর্বস্ব পত্রিকায় প্রচার বন্ধ করা করেছেন বিচারক। এর ফলে ব্যাংকগুলো ও খেলাপিরা তৎপর হয়েছে। স্বল্প সময়ে মামলার সুফল এসেছে।
পরোয়ানা জারি হয়েছে ১ হাজার ৯৬৮ ॥ অর্থঋণ মামলায় খেলাপি ঋণ পরিশোধে বাধ্য করার জন্য বন্ধকি সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগ এবং জামানতবিহীন ঋণ খেলাপিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও বিপুল পরিমাণ খেলাপি আদায়ে বিচারক অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। প্রায় দুই বছরে খেলাপিদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৯৬৮টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সিএমপি কমিশনার বরাবর তাগিদ প্রেরণ করার ফলে পরোয়ানা তামিলের হার বেড়ে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন