ছবি সংগৃহীত
আরব্য রজনীর রূপকথা বুঝি একেই বলে! প্রীতি ম্যাচ হলেও লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এই দ্বৈরথ উত্তাপ ছড়াচ্ছিল আগে থেকেই। সেই উত্তাপ রোমাঞ্চে রূপ নিয়েছে ম্যাচ শুরু হতেই। প্রথম মিনিট থেকে শুরু হয় টান টান উত্তেজনার এক লড়াই। শুরুতেই গোল করলেন মেসি। জবাব দিয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান রোনালদো।
পিএসজি ও রিয়াদ অল স্টারের প্রীতি ম্যাচটি ৪৫ মিনিট শেষ হওয়ার আগে হয়ে ওঠে ‘অপ্রীতিকর’। লাল কার্ড দেখেন পিএসজির জোয়ান বের্নাত। এরপর যোগ করা সময়ে নেইমারের পেনাল্টি মিস এবং বিরতিতে যাওয়ার আগে আবার রোনালদোর দ্বিতীয় গোল।
হাতারকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ভক্ত-সমর্থকদের এই প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য বসিয়ে রেখে দুইজনই পৌঁছে গেছেন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে। মাঠে অনেকদিন দুজনের দেখাও সেই আগের মতো হয় না বললেই চলে। তবে সেই অপেক্ষা ফুরোলো নতুন বছরের শুরুতে।
গত মাসে কাতারে বিশ্বকাপ খেলে গেছেন মেসি-রোনালদো। তার মাস যেতেই মরুর বুকে আবারও ফুটবল উৎসব। তবে এবার সৌদি আরবের রিয়াদে। দিন চারেক আগে কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে সুপার কাপ জিতেছে বার্সেলোনা। মাঠে এল ক্লাসিকো— আর ঠিকানা পাল্টালেও আলোচনায় মেসি-রোনালদো থাকবেন না সেটি কি হয়! সেই রেশ কাটতে না কাটতেই প্রীতি ম্যাচে সিআর সেভেনের রিয়াদ অলস্টারের (সৌদির ক্লাব আল-নাসর ও আল-হিলালের খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত দল) বিপক্ষে মাঠে নামলেনে আর্জেন্টাইন এলএমটেন।
২০২০ সালে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিলেন মেসি-রোনালদো। তখন মেসি ছিলেন বার্সায় আর রোনালদো রিয়াল ছেড়ে যোগ দিয়ছেন জুভেন্টাসে। অনেক জল গড়ানোর পর দেড় বছর আগে মেসি যোগ দেন পিএসজিতে। রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন আল-নাসরে। ইউরোপের ফুটবলে সিআর সেভেনের ফেরার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ।
অনেকের তাই ধারণা, রিয়াদের প্রীতি ম্যাচটিই দুজনের শেষ সাক্ষাৎ। সব ছাপিয়ে যেটি হয়ে ওঠো মেসি-রোনালদোর ম্যাচ। সেই ম্যাচে শেষ হাসি প্রথমাধার্ধে ১০ জনের দল হয়ে পড়া পিএসজির। আর সৌদির ফুটবলে অভিষেকেই জোড়া গোল করেও পরাজিতের দলে রোনালদো। গোলবন্যার ম্যাচে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা ৫-৪ গোলে হারিয়েছে অলস্টারকে।
ম্যাচ শুরুর তৃতীয় মিনিটেই মেসির গোল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর উদ্যাপন দেখে বসে থাকবেন, এমন লোক নন রোনালদো। ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ঠিকই জাল খুঁজে নেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। এর ৫ মিনিট পর হুয়ান বের্নাট লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দল হয়ে পড়ে পিএসজি।
তবে তাতেও ক্রিস্তফ গালতিয়েরের শিষ্যদের গোলবন্যা থামেনি। ৪৩ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের পাসে পিএসজিকে এগিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মারকুইনহোস। তবে প্রথমার্ধের রোমাঞ্চ এখানেই শেষ নয়। যোগ করা তৃতীয় মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হোন তাঁর ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ নেইমার।
সেই সুযোগে রোনালদোও পিএসজিকে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে দেননি। ৩ মিনিট পর নিজের জোড়া গোলে অলস্টারকে সমতায় ফেরান ৩৭ বছর বয়সী তারকা। সেই সঙ্গে ইউরোপকে এক বার্তাও দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, বয়স হয়েছে তাতে কী! এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে গুনে গুনে গোল হয়েছে আরও পাঁচটি। ৫৩ মিনিটে জাল খুঁজে নেন রোনালদোর সাবেক রিয়াল সতীর্থ সার্জিও রামোস। এর তিন মিনিট পর জ্যাং-হিয়ুন সুরের গোলে ফের সমতায় ফেরে অলস্টার। ৬০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে পিএসজির হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন এমবাপ্পে। এর এক মিনিট পর উঠে যান রোনালদো। পরের মিনিটে মেসিও। পিএসজির ৫ম গোলটি করেন হুগো একিতিকে। অতিরিক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে অলস্টারের হয়ে ব্যবধান কমান তালিসকা।
এ নিয়ে মেসি-রোনালদো মুখোমুখি হলেন ৩৭ বার। তাতে ১৭ জয় মেসির। ১১ জয় রোনালদোর। ভক্ত-সমর্থকরা চাইবেন, দুজনের এটাই শেষ দেখা না হোক। ভবিষ্যতে কখনো যদি রোনালদো ইউরোপের ফুটবলে ফেরেন কিংবা মেসি যোগ দেন সৌদির ফুটবলে তবে আবারও দুজনের দেখা হয়ে যেতে পারে। সেই গুঞ্জনও যে শোনা যাচ্ছে না, তা কিন্তু নয়!