
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ ছয়টি এলাকায় ভয়ানক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার কিয়েভে প্রায় ৭৫টি ড্রোন হামলা চালানো হয়। দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিই কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা বলে দাবি করেছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ।
তবে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ এটাও দাবি করেছে যে, তারা রাশিয়ার বেশিরভাগ হামলাই ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাদের ৭৫টি ড্রোনের মধ্যে ৭১টি ভূপাতিত হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। খবর রয়টার্স ও সিএনএনের।
ইউক্রেন বিমানবাহিনী এক টেলিগ্রাম বার্তায় বলেছে, রাশিয়া কুরস্ক অঞ্চল ও প্রাইমারর্সক্রো-আখতারস্ক অঞ্চল দিয়ে এই ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হামলায় ইরান নির্মিত শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় কিয়েভ জুড়ে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। আর এটি ৬ ঘণ্টা ধরে চলে। দেশটির ছয়টি অঞ্চলে এই ড্রোন হামলা চালানো হলেও কিয়েভই ছিল মূল লক্ষ্য।
বার্তায় বলা হয়েছে, রাশিয়ার চালানো ড্রোন হামলা এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল ট্রুপস, মোবাইল ফায়ার গ্রুপ ও ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার ইউনিট নস্যাৎ করে দিয়েছে। তারা একটি কেএইচ-৫৯ গাইডেড মিসাইলও ধ্বংস করেছে।
বিমানবাহিনীর প্রধান মাইকোলা ওলেসচুক বিমান হামলা প্রতিরোধী ‘মোবাইল ফায়ার’ ইউনিটের কার্যকারিতার প্রশংসা করেন। ওলেসচুক বলেন, এগুলোই প্রায় ৪০ শতাংশ ড্রোন ভূপাতিত করেছে। সাধারণত এই ইউনিটে দ্রুত পাল্টা ঠেকাতে মেশিনগানসহ ট্রাক প্রস্তুত থাকে।
মেয়র ভিতালি কিতশকো টেলিগ্রামে বলেন, এ হামলায় ১১ বছরের একটি মেয়েসহ পাঁচজন আহত হয়েছে এবং শহরের নানা জেলায় ভবন ধ্বংস হয়েছে। ভূপাতিত একটি ড্রোনের অংশ থেকে শিশুদের একটি নার্সারিতে আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া এমন এক দিনে হামলা করেছে যেদিন ইউক্রেনীয়রা তাদের জাতীয় শোক পালন করে। ১৯৩২–৩৩ সালের হলোদমোর দুর্ভিক্ষে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। সেই সময়কে স্মরণ করে ইউক্রেন এ দিনে জাতীয় শোক পালন করে থাকে।
তিনি টেলিগ্রামে বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত আতঙ্কৃ হত্যা করতে পারেন বলে রাশিয়ার নেতা গর্ববোধ করেন।’
এর আগেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হলোদমোর ও রাশিয়ার বর্তমান অভিযানের মধ্যে সাদৃশ্য দেখিয়েছিলেন।
ইউক্রেনীয় মানুষের ওপর সোভিয়েত ইউনিয়নের গণহত্যা চালানোকে হলোদমোর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউক্রেন ও অন্যান্য আরও ৩০টি দেশ। সে সময় ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শাসনাধীন ছিল এবং এর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল।
ওই সময়ের মৃত্যুগুলো ইচ্ছাকৃত গণহত্যা ছিল–এ দাবি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মস্কো। মস্কো বলে, রাশিয়া ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীগুলোও এ দুর্ভিক্ষের ভুক্তভোগী হয়েছিল।
এ হামলার লক্ষ্য তাৎক্ষণিক স্পষ্ট না হলেও ইউক্রেন স¤প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরেই সতর্কতা দিয়ে আসছে। কিয়েভ বলছে, ইউক্রেনের জ্বালানি ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য রাশিয়া আবারও বিমান হামলা চালাতে পারে।
ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, এ হামলার কারণে রাজধানীর ৭৭টি আবাসিক ভবনসহ প্রায় ২০০ ভবন জ্বালানি শূন্য হয়ে পড়ে।