ছবি সংগৃহীত
রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ এক ছেলে নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে। বাজারের প্লাস্টিক ব্যাগের ভেতর থেকে কান্নার শব্দ পেয়ে আশপাশের লোকজন নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। কে বা কারা নবজাতককে রাস্তায় ফেলে গেছে তা এখনো জানা যায়নি।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর বাসার সামনের রাস্তার নালার পাশ থেকে নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।
নবজাতককে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা সহযোগিতায় নিয়োজিত ছিলেন—ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম খান, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নেতা-কর্মী ও সিকিউরিটি গার্ড, ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষ বশির আহমেদ ভূঁইয়াসহ অন্যান্যরা।
উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সিকিউরিটির সহকারী কমান্ডার গার্ড হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বাচ্চাটিকে বাজার করার ১০ টাকা দামের প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে করে নালায় ফেলা হয়েছিল। পরে দুটি ছেলে প্রস্রাব করতে এসে বাচ্চাটি দেখতে পায়। পরে সেখান থেকে রাস্তায় নিয়ে এসে আমাদের খবর দেয়। বাচ্চাটি তখন মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। তারপর স্যারদের সহায়তায় আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সেক্টরের সিকিউরিটি কমান্ডার ইলিয়াস আমাকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানায়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। সেই সঙ্গে লুবানা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালককেও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর জন্য ফোনে জানাই। নবজাতক বাচ্চাটির নাম আমির আলী লিখে এবং আমি অভিভাবক হয়ে হাসপাতালে বাচ্চাটি ভর্তি করিয়েছি। বাচ্চাটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। যার কারণে ডোনার নিয়ে এসে রক্তদানের ব্যবস্থা করেছি।’
যুবলীগ নেতা সেলিম খান বলেন, ‘আমার নিজের তরফ থেকেই বাচ্চাটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আল্লাহ যদি বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে রাখেন, তাহলে আমি নিয়েই লালনপালন করব।’
এদিকে লুবানা জেনারেল হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিপ্লব কুমার বসাক বলেন, ‘বাচ্চাটা আমরা ক্রিটিক্যাল অবস্থায় পেয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় মাল্টিপল ইনজুরি ছিল। আল্লাহর রহমতে এখন কিছুটা কন্ট্রোলে এসেছে। সবার সহযোগিতায় এখন স্যালাইনটা শুরু করতে পেরেছি। বাচ্চাটির অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। যার কারণে ২৪ ঘণ্টা না হলে কিছুই বলা যাবে না। এখনো শক অবস্থায় আছে।’
ডা. বিপ্লব কুমার বসাক বলেন, ‘নবজাতকের গালে, হাতে, পেটে, অণ্ডকোষে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত রয়েছে।’ আঘাতের কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ডেলিভারি ঠিকমতো না হলে আঘাত পেতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নবজাতককে ছুড়ে ফেলার কারণে আঘাত পেয়েছে।’
অপরদিকে উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাফিন ইসতিয়াক রুবেল বলেন, ‘পাবলিকের ফোনের মাধ্যমে লুবানা জেনারেল হাসপাতালে এসে জানতে পারি এক নবজাতক শিশুকে কে বা কারা ফেলে গিয়েছিল। পরে পথচারীরা কান্নার শব্দ শুনে লুবানা হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুটি নাড়ির ভেতর থেকে ছেঁড়া ও বিভিন্ন জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় ছিল। এসব আঘাতের মধ্যে অণ্ডকোষে, ঠোঁট, গালে, হাতে আঘাত বেশি ছিল। যে বা যারাই শিশুটিকে ফেলে যাক না কেন, তাঁদের শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’