ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিতের আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের

নিউজ জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ৩০ মে ২০২৩

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিতের আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের

ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ওলিভিয়ার ডি শ্যুটার। তিনি মনে করেন, এই আইন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ে বাধা সৃষ্টি করবে।

সোমবার বাংলাদেশে ১২ দিনের সফর শেষে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওলিভিয়ার ডি শ্যুটার ।

বিশেষ প্রতিবেদক ডি শ্যুটার স্বাধীনভাবে কাজে বিশ্বাসী সুশীল সমাজের ওপর সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নানাবিধ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ওই আইনের অধীনে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের তাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগের কারণে আটক করা হয়েছে।

ডি শ্যুটার বলেন, ‘এই বিষয়গুলো দেশটি যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে শুধু তাদেরই শঙ্কিত করবে না বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। আপনি জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারবেন না।’

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ওলিভিয়ার ডি শ্যুটার বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশকে দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করলেও তা ‘ভঙ্গুর’ অবস্থায় রয়েছে এবং সমাজে আয় বৈষম্য বাড়ছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পেতে সাধারণ মানুষকে ঘুষ দিতে হয় বা তাদের রাজনৈতিক সংযোগ থাকতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সফরকালে ওলিভিয়ার বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করেন এবং দারিদ্র্যসীমায় থাকা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে সামগ্রিক আয়ের বৈষম্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও, এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়ে গেছে এবং বিশেষ করে শহরাঞ্চলে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’

নতুন ধরনের এক দরিদ্র শ্রেণি উত্থিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো এমন পরিবার যারা দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরে রয়েছে, তাদের সঞ্চয় নেই। তাই যেকোনো একটি ধাক্কার পরে তারা দরিদ্র হয়ে পড়ার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

গত বছর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের জরিপের উল্লেখ করে শ্যুটার বলেন, এতে দেখা যায়, দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৫১ শতাংশ মানুষ সম্প্রতি দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে নতুন দরিদ্র হয়ে গেছে। অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দারিদ্র্য হ্রাসে সাধারণ অগ্রগতি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়ে গেছে।

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে প্রত্যাশিত স্তরে উন্নীত হওয়ার পর একটি অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওলিভিয়ার বলেছেন, ‘মানুষকে দরিদ্রতার মধ্যে রেখে একটি দেশ তার আপেক্ষিক সুফল বা উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের মতো একটি রপ্তানি খাত দ্বারা ব্যাপকভাবে চালিত, যা সস্তা শ্রমের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।’

ডি শ্যুটার সরকারকে ২০২৬ সালে এলডিসি মর্যাদা থেকে আসন্ন উন্নীতকরণের সুযোগ ব্যবহার করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর তার নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানান। তার মতে, এই শিল্প ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের বর্তমান রপ্তানি আয়ে শতকরা ৮২ ভাগ অবদান রাখছে।

ডি শ্যুটার সরকারকে সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা আরও যৌক্তিক করার জন্য আহ্বান জানান, যেটিকে তিনি ‘এডহক বা সাময়িকভিত্তিতে ১১৯টি স্কিমের একটি সমন্বিত কর্ম হিসেবে বর্ণনা করেছেন।’ তবে এগুলো দুর্বলভাবে সমন্বিত, যা বাংলাদেশিদের প্রত্যাশিত আয়ের নিরাপত্তা প্রদান করে না।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, কর থেকে প্রাপ্ত জিডিপির অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে কম হয়েছে (প্রায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে অর্থায়নের জন্য প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সরকারি রাজস্ব আসে পরোক্ষ কর থেকে। অথচ আয়ের ওপর প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। তিনি বলেন, ‘চিত্রটি উল্টো হওয়া উচিত। উচ্চ-আয় উপার্জনকারী মানুষ এবং বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে জনসাধারণের পরিষেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার অর্থায়নে অবদান রাখতে হবে, গ্রাহকদের নয়।’

কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কক্সবাজার সফর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডি শ্যুটার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য জনাকীর্ণ দেশ বাংলাদেশের সরকারকে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি আশ্রয়শিবিরের বসবাস-অনুপযোগী অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।’

জাতিসংঘের এই বিশেষ প্রতিবেদক জানান, এটি ‘অনভিপ্রেত’ যে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যৌথ পরিকল্পনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দাতারা এতই কম অবদান রেখেছে যে, চাহিদার শতকরা মাত্র ১৭ ভাগ অর্থায়ন জোগাড় হয়েছে। মার্চ ২০২৩ সাল থেকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে তার খাদ্য ভাউচারের মূল্য প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে হয়েছে এবং এটি আগামী জুনে আরও কমিয়ে ৮ ডলার করা হবে।

ডি শ্যুটার সতর্ক করেন, অপুষ্টি এবং যথেষ্ট পুষ্টির অভাব বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে শিশুদের পরিণতি ভয়াবহ হবে।

তার ভাষায়, ‘পরিবারগুলো মরিয়া হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ সরকার যদি রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং মানবাধিকার আইন অনুযায়ী তাদের আয়-উপার্জনের সুযোগ করে দেয়, তবে অন্তত তাদের কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে।’

২০২৪ সালের জুনে বিশেষ প্রতিবেদক তার বাংলাদেশবিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করবেন।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ:

মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস। প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী।
খোলাবাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ২ টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা ও সুপার পামওয়েল ১৩৫ টাকা নির্ধারণ। বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা। পাঁচ লিটারের দাম বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা করা হয়েছে।
তীব্র গরমে অতিষ্ট জনজীবন। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
বান্দরবানে যৌথ অভিযানে আটক কেএনএফ’র ৫৭ জনকে আদালতে উপস্থাপন। ৫২ জন দুই দিনের রিমান্ডে।
ইসরায়েলের মাটিতে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিতে মিত্রদের সাথে যোগাযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ। অন্য ম্যাচে আর্সেনালকে পরাজিত করে শেষ চারে বায়ার্ন মিউনিখ।