ঢাকা,  রোববার  ১১ মে ২০২৫

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

ওষুধ ও প্রসাধনীর জন্য আলাদা আইন চায় ব্যবসায়ীরা

নিউজজার্নাল২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

ওষুধ ও প্রসাধনীর জন্য আলাদা আইন চায় ব্যবসায়ীরা

ওষুধ ও প্রসাধনীকে একই আইনের আওতায় না এনে শিল্প দুটিকে আলাদা আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা।

রোববার (১৬ এপ্রিল) দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা এই দাবি জানান।

সেমিনারে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩ এর ৩১-৩৫ ধারা অনুযায়ী কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি-রপ্তানি এবং এই কাজে নিয়োজিত কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান মালিককে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে নিবন্ধন ও লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ একই বিষয়গুলো অনুসরণ করে ‘বিএসটিআই আইন ২০১৮’ এর অধীনে কসমেটিক্সের প্রয়োজনীয় সমস্ত লাইসেন্স প্রদান করে আসছে বিএসটিআই। একই বিষয়ে নতুন একটি রেগুলেটর শুধুমাত্র আরেকটি স্তর তৈরি করবে এবং ব্যবসা করার খরচ ও জটিলতা বাড়াবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় এমন কোনো আইন করা হবে না। যখনই কোনো আইন করা হয়, তা মানুষের মঙ্গলের জন্যই করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের সেবা দেওয়া ও তা নিশ্চিত করা।

মন্ত্রী আরও বলেন, আগামিতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রসাধনী শিল্পের অংশীজনদের নিয়ে একটি শুনানির আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যান্ডেট হলো দেশের মানুষের স্থাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য তিকর এমন বিষয়গুলোকে রোধ করা। আইনটি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই আইন পাশের আগে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে কসমেটিক্স সেক্টরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত নিশ্চিতের আহবান করেন তিনি।

এর আগে অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ঔষধ ও কসমেটিক দুটো পণ্যই  সাধারণ ভোক্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  এবং প্রাত্যাহিক জীবনের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে জড়িত। তবে এ দুটি পণ্যের চাহিদা এবং ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুটো শিল্পের জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।

তবে উৎপাদন পর্যায় থেকে আমদানি পর্যন্ত এ দুটি পণ্যের ব্যবহারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় একই আইনের আওতায় এনে ঔষধের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রসাধনী সামগ্রীর কার্যক্রম পরিচালিত হলে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাবসায়ীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীরা আশংকা করছেন।

তিনি আরও বলেন, কসমেটিক্স এবং ঔষধের জন্য একই আইন ও এর প্রয়োগ ঔষধ প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। কারণ আইন অবশ্যই ব্যবসা বান্ধব হতে হবে। এটি না হলে এই শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে পরবে যা কর্মসংস্থানের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি।

সাধারণত যে কোনো আইন প্রণয়ন করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও উলে­খিত আইনটি তৈরির ক্ষেত্রে কসমেটিক্স ব্যাবসায়ীদের সাথে আলোচনা করা হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন। তাই আইনটি বাস্তবায়নের পূর্বে এর প্রায়োগিক সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে এফবিসিসিআই এই সেমিনানের আয়োজন করেছে বলে উলে­খ করেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ড্রাগ আইনটি বেশ ভালো। পূর্বে অ্যান্টিবায়োটিক সবাই যে যার মতো ব্যবহার করতে পারলেও নতুন আইনের মাধ্যমে তা পারবে না। এসময় ক্ষুদ্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, দেশ, দেশের প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগীতা সক্ষমতার জন্য সবরকম সহযোগীতা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশে পরিনত হতে পারবে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিএসটিআই হতে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

প্যানেল ও উন্মুক্ত আলোচনায় যুক্ত হয়ে বক্তারা বলেন, কসমেটিক্স এবং ঔষধ প্রকৃতিগতভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের পণ্য। যেহেতু কসমেটিকস হলো ভোক্তার কাঙ্তি সুবিধার উপর ভিত্তি করে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার এবং সৌন্দর্যায়নের জন্য ভোক্তা বান্ধব পণ্য, সেহেতু এগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাধারণত ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। অন্যদিকে ঔষধ রোগ, নিরাময় এবং চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত। এছাড়া ঔষধের ব্যবহারের সাথে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকি জড়িত, তাই ঔষধের ক্ষেত্রে পৃথক নিয়ন্ত্রণমূলক বিধানগুলো প্রযোজ্য হয়ে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শে এটি ব্যবহৃত হয়। এই কারণেই, এই দুই ধরণের পণ্যগুলো আলাদা আলাদা আইন ও বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার যৌক্তিকতা ও আবশ্যকতা রয়েছে।

খসড়া আইনের ধারা ৩৫-এ মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি উলে­খ করা হয়েছে। যা বিশ্বের অন্য কোনো আইনে কসমেটিকসের জন্যে প্রযোজ্য নয় বলেও অভিযোগ করেন কসমেটিক্স ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, খসড়া আইনে প্রস্তাবিত নতুন বিধানগুলো কসমেটিকস শিল্পের উৎকর্ষই শুধু বাঁধাগ্রস্ত করবে না, এই শিল্প পরিচালনার ব্যয়ও বাড়িয়ে দিবে। এর ফলশ্রুতিতে কসমেটিকস শিল্পে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে এবং বর্তমান কসমেটিকস খাতের বিনিয়োগও ঝুঁকির মুখে পড়বে। সর্বোপরি কসমেটিকস পণ্যের দামও উলে­খজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে, যার সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়বে ভোক্তাসাধারণের উপর।

বক্তারা আরও বলেন, এই আইন বাস্তবায়িত হলে নতুন কসমেটিকস বাজারে আনা সময়সাপে ও ব্যয়বহুল হবে এবং যার ফলে ভোক্তাদের পছন্দানুযায়ী কসমেটিকস বাজারে আনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভবপ্রায় হয়ে পড়বে। এতে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এবং কসমেটিকস এর মূল্য বৃদ্ধি পাবে।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, এ দুটি পণ্যের উৎপাদন কার্যক্রম চাহিদা এবং ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পৃথক প্রশাসন থাকা প্রয়োজন। এসময় বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড.মোঃ নুরনবী। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার, বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন সরকার, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ডিএমডি ও সিইও মো. হালিমুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. এম. এ মুবিন খান, মিল­াত কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের এমডি মেহফুজ জামান।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, হাবিব উল­াহ ডন, ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, এফবিসিসিআই পরিচালকবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা।

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন