ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:১২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি

এক সময়ের গ্রামের তালগাছ, নারিকেল ও খেজুর গাছে সুনিপুণ কারিগরের মতো বাসা বেঁধে বাস করত বাবুই পাখি। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার সুদর্শন বাসা। বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষের মনে চিন্তার খোরাকও জোগায়। কিন্তু কালের বিবর্তনে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ এই পাখি হারাতে বসেছে। প্রকৃতি থেকে তালগাছ, নারকেল আর খেজুর গাছ কমতে থাকায় শিল্পীখ্যাত বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে।


সাধারণত তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। তবে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কিছু দেশি বাবুই পাখি বেশি দেখা যায়। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির প্রথম পছন্দ তাল গাছ। এরপর নারিকেল বা সুপারি ও খেজুর গাছ। এরা খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে দলবেঁধে বাসা বাঁধে। বাসার গঠনও বেশ জটিল, তবে আকৃতি খুব সুন্দর। বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত।

বাবুই পাখি শুরুতে বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। অর্ধেক বাসা বাঁধার পর তার সঙ্গীকে খোঁজে। স্ত্রী বাবুইটির পছন্দ হলে মাত্র চার দিনে বাসা বাঁধার কাজ শেষ করে। বাসার নিম্নমুখী একটি গর্ত বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে নেয়। অন্যটি খোলা রেখে দেয় প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে ও বাইরে কাদা লাগিয়ে রাখে। ফলে প্রবল ঝড়ে বা বাতাসেও টিকে থাকে তাদের বাসা। রাতে বাসা আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে এনে বাসায় রাখে।


সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। তাই এদের ঠোঁটের আকৃতি সহজে বীজ ভণের উপযোগী চোঙাকার। আর ঠোঁটের গোড়ার দিকটা মোটা। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।

উখিয়ার দু-একটি গ্রামে এখন বাবুর পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে কয়েক বছর ধরে  দরগাহ বিল ও ডিগলিয়া পালং গ্রামে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ির উঠানে উঁচু নারকেল গাছ ও তাল গাছে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে বাবুই পাখি।

এখন কৃষকরা েেত ও বীজতলায় কীটনাশক ব্যবহার করায় বাবুই পাখি মারা যায়। বংশ রার্থে তারা এলাকা ত্যাগ করেছে। প্রকৃতির ইঞ্জিনিয়ার বলা হয় বাবুই পাখিকে। এক সময় এর অবাধ বিচরণ থাকলেও এখন আর চোখে পড়ে না। বাবুই পাখি প্রকৃতির এক সুন্দর নিদর্শন।

নারিকেল ও তালগাছই একমাত্র এদের আবাসস্থল। বাবুই পাখি রায় নারকেল ও তাল গাছ রোপণ বৃদ্ধি এবং কাটা বন্ধ করতে পারলে হারিয়ে যাওয়া বাবুই পাখির অবাধ বিচরণভূমি হবে উখিয়াতে। প্রকৃতির ভারসাম্য রা ও বাবুই পাখির বংশ বিস্তারে তালগাছ, খেজুর ও নারিকেল গাছ রোপণের বিকল্প নেই। যত্রতত্র কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করাসহ মিলগুলোতে অভিযান চালিয়ে তালগাছ, নারকেল গাছ ফাড়া বন্ধ করতে হবে।

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন