আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো তাবলীগ জামাত আয়োজিত এবারের বিশ্ব ইজতেমা। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন নিজামুদ্দিনের অনুসারী ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। মোনাজাত শেষ হয় ১১টা ৪৩ মিনিটে।
এ সময় আমিন আমিন ধ্বনিতে কম্পিত হয় পুরো ইজতেমা ময়দান। তুরাগ তীরে সমবেত হয়ে অশ্রুভেজা চোখে লাখ লাখ মুসলি দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। আলাহর দরবারে দুই হাত তুলে প্রতিপালকের কাছে মা চেয়ে কান্নার বুক ভাসায় দেশ-বিদেশের লাখো মুসলি। গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের সঠিক পথে চলা এবং তাবলীগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তাওফিক কামনা করে মহান আলাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত প্রার্থনা করা হয়। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসলি স্রষ্টার দরবারে কান্নাকাটি করেন। লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় আমিন-আমিন।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি মাকসুদ। পরে তার বয়ান বাংলা তরজমা করেন মাওলানা আব্দুলাহ। এর পরেই হেদায়েতের বয়ান ও আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন নিজামুদ্দিনের অনুসারী মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।
প্রতি বছর গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা। দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুলি টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমায় অংশ নেন। এছাড়াও সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, কাতার ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মুসুলি বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। এক ময়দানে থাকা-খাওয়া এবং রাত্রিযাপনসহ আল্লাহকে রাজি খুশি করাতে আমল করেন এসব মুসলিরা। ইজতেমা ময়দানে বসে শুনেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সব মাওলানাদের বয়ান। তাবলীগ জামাত আয়োজন করে এই বিশ্ব ইজতেমার। এটি ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে শুরায়ে নিজাম অনুসারী মুসলি এবং দ্বিতীয় পর্বে নিজামুদ্দিন অনুসারী মুসলিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতে শেষ হয় প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকাল থেকেই গাজীপুরসহ আশপাশ জেলা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিরা আসতে শুরু করে ইজতেমার ময়দানে। অনেকেই তুরাগ নদীতে নৌকায় বসে বিভিন্ন কলকারখানা ও বাসা বাড়ির ছাদে মহাসড়কের ওপর ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ জানান আল্লাহর দরবারে। সকাল থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলিরা বাস, ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশা, ট্রেন ও নৌকাসহ বিভিন্ন যানবাহনে এবং পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসেন। হেদায়েতের বয়ান শেষে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত।
নিজামুদ্দিনের অনুসারী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসলির আগমনে ভরে যায় ইজতেমার ময়দান। শান্তিপূর্ণভাবেই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেওয়া সাত মুসলির মৃত্যু হয়েছে।
