কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষি কাজের ধরনে লেগেছে আমূল পরিবর্তন। এক সময় গ্রামবাংলার মাঠে গরু দিয়ে হালচাষ, মই টানা, দোন দিয়ে পানি তোলা ছিল নিত্যদিনের দৃশ্য। এখন সে চিত্র আর দেখা যায় না। যান্ত্রিক যুগে কৃষিকাজেও লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার আর হারভেস্টার মেশিন দখল করে নিয়েছে হাল, লাঙ্গল ও জোয়ালের জায়গা।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শনগর বাজারের কাঠের লাঙ্গল ও জোয়াল বিক্রেতা মতীন্দ্র বিশ্বশর্মা বলেন, “গৃহস্থ কাজের জন্য আমাদের তৈরি কাঠের লাঙ্গল, জোয়াল, মই এখন আর আগের মতো চলে না। তবু ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কোনোভাবে টিকে আছি।”
তিনি জানান, এমন এক সময় ছিল যখন গ্রামের প্রতিটি বড় গৃহস্থের বাড়িতে থাকত হালের বলদ, কাঠের লাঙ্গল, জোয়াল, মই, বিন্দা ও দোন। ভোর হতেই কামলারা গরু ও লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে জমিতে যেত। গভীর রাত পর্যন্ত দোন দিয়ে পানি সেচ দিত।
এখন গ্রামবাংলার মাঠে হালের বলদ আর দেখা যায় না বললেই চলে। জমি চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। সেচে ব্যবহৃত হচ্ছে স্যালো মেশিন। ফসল কাটায় এসেছে হারভেস্টার মেশিন। ফলে এক সময়ের দলবদ্ধ ধানকাটা কিংবা চাষাবাদের সেই সামাজিক রূপ আজ স্মৃতিতে পরিণত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যন্ত্রের দাপটে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে, সময় ও শ্রম খরচও কমেছে। তবে এতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কৃষিযন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট কারিগরদের জীবিকা। অনেকেই পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার সময়ের দাবি হলেও ঐতিহ্য ও কারিগরি দক্ষতাগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। কারণ, এই ঐতিহ্যই বহন করে বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনচিত্রের ইতিহাস।









