ঢাকা,  রোববার  ২৬ অক্টোবর ২০২৫

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মায়ের লাশ দেখতে না দেওয়ায় ৬ ছেলের বিরোধ, সংঘর্ষে নিহত ১

নিউজ জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৭:০৪, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মায়ের লাশ দেখতে না দেওয়ায় ৬ ছেলের বিরোধ, সংঘর্ষে নিহত ১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মায়ের লাশ দেখতে না দেওয়ায় বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে ছয় ছেলে। এর জেরে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একজন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। শনিবার সকালে সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি মো. নাসির উদ্দিন (৬৫) ওই গ্রামের মৃত মইজ উদ্দিনের ছেলে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের মৃত হাসেম মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ বেগম (৯৫) মারা যান। তাঁর ছয় ছেলের মধ্যে নোয়াব মিয়া, আব্দুল হক মিয়া, ফজল হক মিয়া ও শহীদুল হক মিয়া অনেক আগেই বাড়ি ছেড়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের গোষ্ঠীতে যোগ দেন। অন্য দুই ছেলে—জহিরুল হক ও নূরুল হকের সঙ্গে বসবাস করতেন তাঁদের মা। তাঁরা একই গ্রামের ইকবাল হোসেন, বর্তমান ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান ও ব্যবসায়ী সাচ্চু মিয়ার অনুসারী।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের পক্ষের সঙ্গে একই গ্রামের ইকবাল হোসেন, ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান ও ব্যবসায়ী সাচ্চু মিয়ার পক্ষের লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত রমজান মাসে লুডু খেলা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে একাধিকবার সালিস বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসা হয় এবং হারুন অর রশিদের পক্ষের লোকজনকে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিরামপুর গ্রামের ওই বৃদ্ধা মোসাম্মৎ বেগম মারা গেলে হারুন অর রশিদের অনুসারী চার ছেলেকে মায়ের মরদেহ দেখা ও দাফনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেননি সাচ্চু মিয়ার অনুসারী অপর দুই ছেলে জহিরুল ও নূরুল। তাঁরা শুক্রবার রাতেই জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে মায়ের দাফন সম্পন্ন করেন। এতে বৃদ্ধার অন্য চার ছেলে ও হারুন অর রশিদের পক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে শুক্রবার রাত থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

লুডু খেলা নিয়ে পূর্বের বিরোধ এবং লাশ না দেখিয়ে দাফন করার ঘটনায় শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে উভয় পক্ষ বল্লম, টেটা, ছুরি ও দা-সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অংশ নেওয়া অনেকেই হেলমেট, লাইফ জ্যাকেট ও ক্রিকেট প্যাড পরে ছিলেন। সংঘর্ষ চলাকালীন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে এবং উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে সাচ্চু, ইকবাল ও আনিছুরের পক্ষে থাকা নাসির উদ্দিন নিহত হন এবং উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম জানান, গোষ্ঠীগত বিরোধের জেরে দীর্ঘদিন ধরে সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ও ব্যবসায়ী সাচ্চু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। শুক্রবার গ্রামের এক বৃদ্ধা মারা যান। তার ছয় ছেলের মধ্যে চারজন হারুন অর রশিদের ও দুজন সাচ্চু মিয়ার অনুসারী। চার ভাইকে না দেখিয়ে বাকি দুই ভাই মায়ের লাশ দাফন করেন—এ নিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন